আসিফ আমানুল্লাহ, স্টাফ রিপোর্টার: শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে ভারী বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানি নেমে গেলেও ভেসে উঠছে ধ্বংসস্তূপ।
গত দুই তিনদিনে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও পানি কমছে ধীর গতিতে। পানি কমার সাথে সাথেই দেখা দিচ্ছে বিভিন্ন সংকট। ইতিমধ্যে আশ্রয় কেন্দ্র থেকে ঘরে ফিরেছেন অনেকেই। তবে অধিকাংশ ঘরই বন্যার পানিতে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মাটির ঘরগুলো।
উপজেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ৪ হাজার ৬৮ টি ঘর সম্পুর্ন ও ১ হাজার ২০০ ঘর আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে। চরম দুর্ভোগে পড়েছেন বাস্তুহারা এসব পরিবারের সদস্যরা। ঘরবাড়ি ভেঙে যাওয়ায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে গারো সম্প্রদায়ের ভুক্তভোগীরাও।
মরিচপুরান গ্রামের ভুক্তভোগী মরিয়ম বেগম (৭৭) বলেন একটা মাটির দালান ঘর ছিল। পানি আইয়া ভাইঙ্গা গেছে ঘরডা। অনেক কষ্ট কইরা থাকতাছি।এডা ঘর পাইলে কষ্ট কমতো।
ফকিরপাড়া গ্রামের ভুক্তভোগী আছিয়া বেগম (৭০) বলেন গাঙ্গে ঘরবাড়ি ভাইঙ্গা নিছেগা। অনেক কষ্ট কইরা থাকতাছি। মরার আগে এডা ঘর পাইলে কষ্টডা কমতো।
মরিয়ম-আছিয়ার মতো হাজারো গৃহহারা পরিবার ঘর হারিয়ে আর্তনাদ করছে। দিন কাটাচ্ছে অনেক কষ্টে। বাস্তুহারা এসব পরিবারের দাবি তাদের যেন থাকার জন্য একটি করে ঘর দেওয়া হয়।
বানের পানির সাথে ভেসে গেছে উপজেলার হাজারো পুকুরের মাছ। মাথায় হাত পড়েছে মাছ চাষীদের। উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে ২ হাজার ৮৭৫ টি পুকুরে মাছ বন্যায় ভেসে গেছে।
আকস্মিক এই বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষিখাতে। নালিতাবাড়ীতে ১৫ হাজার ১০০ হেক্টর আমন ধান, ১০৮ হেক্টর শাকসবজি ও ৪.৮৪ হেক্টর বস্তায় আদা নষ্ট হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি অফিস।
স্বপ্নে গড়া ফসল হারিয়ে চোখের জল শুকাচ্ছে না কৃষকদের।
বেনীরগোপ গ্রামের কৃষক হাবিবুর রহমান ও মুনছুর আলী বলেন যা ধান করছিলাম সব নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষি আমাদের উপার্জনের উৎস। ধান নষ্ট হয়ে এখন আমাদের দিন চালানো কঠিন।
কৃষকদের দাবি সরকারি প্রণোদনা পেলে কিছুটা ভাগ্যের চাকা ঘুরতে পারে তাদের।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল ওয়াদুদ বলেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তথ্য মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাসুদ রানা দৈনিক জবাবদিহিকে জানান উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হয়েছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।